মহাভারত একটু অন্য চোখে - কৌরবদের ১০২ জন কিকরে?
#মহাভারত_একটু_অন্য_চোখে
#কৌরবদের_১০২_জন_কিকরে_?
#অমিতাভ_ব্যানার্জী
হ্যাঁ, ১০২ জন, এটাই কৌরবদের সদস্য সংখ্যা, হ্যাঁ, ভুল পড়েন নি, সদস্যই লিখেছি। কেন? আমার এই লেখা এবং আগের লেখা পড়লে হয়তো বুঝতে পারবেন। তবু আগের লেখা থেকে সংক্ষেপে বলি গান্ধারীর ১০০ পুত্র ও ১টি কন্যা ও তার সঙ্গিনী সৌভালির ১টি পুত্র, সব মিলিয়ে কৌরবরা ১০২জন।
এবার আসি মহাভারতের অন্যতম আলোচিত কিন্তু সবচেয়ে রহস্যে মোড়া তথ্যে। আমরা সবাই জানি পাণ্ডবদের পাঁচ ভাই আর কৌরব দের একশ ভাই। আমরা হয়তো আরো জানি যে কৌরবদের এক বোন ছিল, আমরা যারা একটু মহাভারতের ব্যাপারে খোঁজ রাখি তারা এটাও জানি যে তাদের আরো একটি বৈমাত্রেয় ভাই ছিল। কিন্তু হয়তো আমদের প্রত্যেকের মনেই সেই আমাদের বোঝার বয়স হবার থেকে একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়, যে একই পিতা মাতার কি করে এক জীবনে ১০০ সন্তান সম্ভব? তার সাথে আবার যদি আরেকটু যুক্তি খুঁজতে যাই তবে দেখবো বয়সের হিসেব করলে ব্যাপারটা গঞ্জিকা সেবন ছাড়া বোঝা দুস্কর। আমার এই বিষয়ে আগের লেখার এক উৎসাহী পাঠক মহাশয় আমাকে এই ব্যাপারে একটা খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। সত্যি কথা প্রশ্নটা আমার চৈনিক ধাঁধার চেয়েও জটিল মনে হয়েছে। তার লেখাই এখানে উদ্ধৃত করছি-
"একটা ব্যাপার এতদিন খেয়াল করিনি এখন মনে পড়লো তাই জিজ্ঞাসা করছি -১০১ ভাইবোনের প্রথম জন দুর্যোধন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় কনিষ্ঠতমের বয়স কমকরে ১০ ধরলে দুর্যোধনের বয়স ছিল কমকরে ১১১ এবং গান্ধারীর বয়স ছিল ১২৯। কিন্তু যাত্রা-সিনেমায় তো গান্ধারীকে ৩৫ /৪০ এবং দুর্যোধনকে ২০/২৫ দেখানো হয়।! সব গোলমাল পাকিয়ে যাবার ভয়েই কি কেউ সবার নাম জানার আগ্রহ দেখায় নি?"
এবার ভাবুন এর উত্তর কি হবে!?
এবার আসি মহাভারতের অন্যতম আলোচিত কিন্তু সবচেয়ে রহস্যে মোড়া তথ্যে। আমরা সবাই জানি পাণ্ডবদের পাঁচ ভাই আর কৌরব দের একশ ভাই। আমরা হয়তো আরো জানি যে কৌরবদের এক বোন ছিল, আমরা যারা একটু মহাভারতের ব্যাপারে খোঁজ রাখি তারা এটাও জানি যে তাদের আরো একটি বৈমাত্রেয় ভাই ছিল। কিন্তু হয়তো আমদের প্রত্যেকের মনেই সেই আমাদের বোঝার বয়স হবার থেকে একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়, যে একই পিতা মাতার কি করে এক জীবনে ১০০ সন্তান সম্ভব? তার সাথে আবার যদি আরেকটু যুক্তি খুঁজতে যাই তবে দেখবো বয়সের হিসেব করলে ব্যাপারটা গঞ্জিকা সেবন ছাড়া বোঝা দুস্কর। আমার এই বিষয়ে আগের লেখার এক উৎসাহী পাঠক মহাশয় আমাকে এই ব্যাপারে একটা খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। সত্যি কথা প্রশ্নটা আমার চৈনিক ধাঁধার চেয়েও জটিল মনে হয়েছে। তার লেখাই এখানে উদ্ধৃত করছি-
"একটা ব্যাপার এতদিন খেয়াল করিনি এখন মনে পড়লো তাই জিজ্ঞাসা করছি -১০১ ভাইবোনের প্রথম জন দুর্যোধন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় কনিষ্ঠতমের বয়স কমকরে ১০ ধরলে দুর্যোধনের বয়স ছিল কমকরে ১১১ এবং গান্ধারীর বয়স ছিল ১২৯। কিন্তু যাত্রা-সিনেমায় তো গান্ধারীকে ৩৫ /৪০ এবং দুর্যোধনকে ২০/২৫ দেখানো হয়।! সব গোলমাল পাকিয়ে যাবার ভয়েই কি কেউ সবার নাম জানার আগ্রহ দেখায় নি?"
এবার ভাবুন এর উত্তর কি হবে!?
ঠিক এখানেই সমস্ত রহস্য। মহাভারতকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খুঁজে একটা তথ্য পাওয়া গেলো যে স্বয়ং ব্যাসদেব গান্ধারীকে শতপুত্রবতী হবার বর দিয়েছিলেন, কিন্তু গান্ধারীর প্রসূতি অবস্থা প্রায় দুই বছর স্থায়ী ছিল। ইতিমধ্যে ধর্মরাজের(ওরফে যমরাজ) কৃপায় (থুড়ি বরে) যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র সৌভালি কে দিয়ে চেষ্টা করেও কুলের প্রথম বংশধর পেতে অক্ষম হন। ওদিকে গান্ধারী তো জটিল অবস্থায় ছিলেনই। এই চরম ব্যর্থতায় গান্ধারী এতটাই কুপিত হন যে ক্রোধে নিজের গর্ভে প্রচন্ড আঘাত করে ভেতরের ভ্রূণকে নষ্ট করে ফেলেন।
স্বভাবিকভাবেই এই সময় গান্ধারীর শরীরের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ব্যাসদেবের ডাক পড়ে। তিনি এসে প্রথমেই বলেন যে তাঁর বর ব্যর্থ হবার নয়। এরপর গান্ধারীর অকাল প্রসব করালে একটি বৃহৎ মাংসপিন্ড পাওয়া যায়। এই পিন্ডটিকে ব্যাসদেব ১০১ টুকরো করেন এবং প্রত্যেকটি টুকরো একটি করে মাটির ঘী ভরা পাত্রে রেখে তাতে বিভিন্ন ওষধি মিশ্রিত করে তা বিভিন্ন স্থানে মাটির তলায় পুঁতে রাখেন।
এই পাত্রগুলি দুইবছর ধরে মাটির তলায় রাখা থাকে ঠিকই কিন্তু ব্যাসদেবের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত শিষ্যেরা এগুলি পুরো দুই বছর ধরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পরিচর্যা করতে থাকেন। এই ঘটনার সময় গান্ধারী ব্যাসদেবের কাছে একটি কন্যার জন্য আবেদন করলে ব্যাসদেব তাকে আশ্বস্ত করেন। এই দুই বছর পার হলে মাটির পাত্রগুলি একে একে তোলা হয় এবং সে গুলির প্রত্যেকটি থেকে একটি করে জীবন্ত সদ্যজাত শিশু বার করা হয়। তার মধ্যে ১টি কন্যা। প্রথম যে শিশুটি জন্মায় তার নাম দেওয়া হয় "শুয়োধন" কিন্তু তার জন্মের সাথে সাথে দুটি ঘটনা ঘটে, প্রথমে শিয়াল ডাকতে শুরু করে এবং খবর আসে তার সামান্য আগে কুন্তীর দ্বিতীয় পুত্র ভীম(পবনদেবের আশীর্বাদে) জন্মায়। এই শিয়ালের ডাককে অশুভ মনে করে বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে এই পুত্রকে ত্যাগ করতে বলেন, কিন্তু তিনি রাজি হন না, তখন ওই শিশুটির নাম পরিবর্তন করে "দুর্যোধন" রাখা হয়। সম্ভবত তৎপরবর্তী যে কটি শিশু ওই শিয়ালের ডাকের মধ্যে জন্মায় তাদের সবার নাম "দুঃ" দিয়ে শুরু হয়। অবশ্য যদি স্রেফ মিল রাখার জন্যেও তা করা হয় তবে প্রথম দিকের কয়েকজন বাদে বাকিদের ক্ষেত্রে তা হলোনা কেন? যথা, দুর্যোধন, দু:শাসন, দু:সহন, দু:শলন দুঃশলা ইত্যাদি।
এই পাত্রগুলি দুইবছর ধরে মাটির তলায় রাখা থাকে ঠিকই কিন্তু ব্যাসদেবের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত শিষ্যেরা এগুলি পুরো দুই বছর ধরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পরিচর্যা করতে থাকেন। এই ঘটনার সময় গান্ধারী ব্যাসদেবের কাছে একটি কন্যার জন্য আবেদন করলে ব্যাসদেব তাকে আশ্বস্ত করেন। এই দুই বছর পার হলে মাটির পাত্রগুলি একে একে তোলা হয় এবং সে গুলির প্রত্যেকটি থেকে একটি করে জীবন্ত সদ্যজাত শিশু বার করা হয়। তার মধ্যে ১টি কন্যা। প্রথম যে শিশুটি জন্মায় তার নাম দেওয়া হয় "শুয়োধন" কিন্তু তার জন্মের সাথে সাথে দুটি ঘটনা ঘটে, প্রথমে শিয়াল ডাকতে শুরু করে এবং খবর আসে তার সামান্য আগে কুন্তীর দ্বিতীয় পুত্র ভীম(পবনদেবের আশীর্বাদে) জন্মায়। এই শিয়ালের ডাককে অশুভ মনে করে বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে এই পুত্রকে ত্যাগ করতে বলেন, কিন্তু তিনি রাজি হন না, তখন ওই শিশুটির নাম পরিবর্তন করে "দুর্যোধন" রাখা হয়। সম্ভবত তৎপরবর্তী যে কটি শিশু ওই শিয়ালের ডাকের মধ্যে জন্মায় তাদের সবার নাম "দুঃ" দিয়ে শুরু হয়। অবশ্য যদি স্রেফ মিল রাখার জন্যেও তা করা হয় তবে প্রথম দিকের কয়েকজন বাদে বাকিদের ক্ষেত্রে তা হলোনা কেন? যথা, দুর্যোধন, দু:শাসন, দু:সহন, দু:শলন দুঃশলা ইত্যাদি।
এই পর্যন্ত তো মহাভারত ও বিভিন্ন পুরান থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ঘটনাটা কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য। পুরান এবং মহাভারতের মধ্যে যে তফাৎ তা হলো, মহাভারত অপেক্ষাকৃত বাস্তব ধর্মী মানে তার অনেকটাই যুক্তিগ্রাহ্য, যদিও সব নয় কারন এটি যতই হোক একটি মহাকাব্য তাই রচয়িতার কল্পনার একটা সুযোগ থাকছেই। কিন্তু তবু এই একশোএক সন্তানের জন্মের ব্যাপারটা মহাভারতের হিসেবেও বেশ অকল্পনীয় কারন শিশুর জন্ম একটা স্বাভাবিক ঘটনা। সেটাকে এতটা অবাস্তব করার কি এমন প্রয়োজন পড়লো? যদি মেনেও নেওয়া যায় যে শতাধিক সন্তান জন্মের ব্যাপারটা রাখতেই হবে, তবে পাণ্ডবদের মত কোন দৈব সাহায্য নেবার কথা বলা হলো না কেন? ঠিক আছে, তাদেরকে যদি খল বানাতেই হয় তবে দেবতার বদলে অসুরের সাহায্যের কথা বলা হতে পারত, কিন্তু তা করা হলো না। আবার এদিকে বিভিন্ন সূত্রে এটাও বর্তমানে প্রমান পাওয়া যাচ্ছে যে মহাকাব্য দুটির কিছু অংশের বাস্তব অস্তিত্ব থাকলেও থাকতে পারে। তাহলে কৌরবদের জন্ম রহস্য টা এতটা অবাস্তব হলো কি করে? যেখানে কোনো দৈব সাহায্য ছাড়াই মায়ের গর্ভের বাইরে দু বছর বাদে শিশুর জন্ম হলো তাও আবার একটা দুটো নয়, একেবারে শতাধিক!
মানব ইতিহাসের যেটুকু নথিবদ্ধ হয়েছে তা থেকে এইটুকু জানা যায় যে পৃথিবীতে একই মাতার গর্ভে সর্বাধিক সন্তানের জন্ম হয়েছিল রাশিয়াতে ফিওডোর ভাসিলিয়েভ এর ঔরসে।তার প্রথমা স্ত্রী জন্ম দিয়েছিলেন ৬৯টি সন্তানের তার মধ্যে ১৬টি ছিল যমজ, ৭টি ছিল ত্রয়ী, এবং ৪টি ছিল চতুষ্ঠয় এবং তাদের সময় লেগেছিল ১৭২৫ থেকে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৪০ বছর। ওই মহিলা মোট ২৭বার গর্ভ ধারণ করেছিলেন এবং এক নারীর পক্ষে সুস্থ অবস্থায় ৪০ বছরে ২৭ বার গর্ভধারণ করা অসম্ভব নয়। তাহলে গান্ধারীর ক্ষেত্রে এই রকম একটা যুক্তির আশ্রয় কেন নেওয়া হলো না? তার কারন এতে যে সময় লাগবে তাতে জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠের মধ্যে বয়সের যে তফাৎ হবে এবং বাবা মায়ের যে বয়স হবে সবটাই যদি অসম্ভব নাও হয় তবুও কাহিনীর সময়কালের সাথে কোনো ভাবেই তাল রাখা যাবে না।
এই ব্যাপারে বিভিন্ন পন্ডিতদের বিভিন্ন সময়ের যুক্তি বিশ্লেষণ করে অনেক গুলো মত পাওয়া গেছে। আমি এই মতগুলির মধ্যে আমার মতে সবচেয়ে অবাস্তব থেকে সবচেয়ে বাস্তব ক্রমান্বয়ে সাজাচ্ছি। ঘটনাটা কি হতে পারে তা পাঠকের কল্পনা ও যুক্তির ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। আর একটি কথা, এই বিষয়ের মতের উৎসগুলি উহ্য রাখছি অকারণ বিতর্ক সৃষ্টির থেকে বিরত থাকার জন্য।
পাত্রের মধ্যে জন্মানোর ব্যাপারটা কয়েকজন টেস্ট টিউব বেবি(ভিট্রিও ফার্টিলাইজেশান) এবং স্টেম সেল রিসার্চ এর প্রাচীন পদ্ধতি বলে উল্লেখ করেছেন। এটা কতদূর বাস্তব হতে পারে তা পাঠকরাই বলবেন। আমি অবশ্য এই মতটি এত গম্ভীর বিষয়কে একটু হালকা করার জন্য রাখলাম।
অন্য কয়েকজনের মতে গান্ধারী ২টি থেকে ৫টি (কোনো কোনো মতে ১৩টি) অবধি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বাকি গুলি ধৃতরাষ্ট্রের উপপত্নীদের সাহায্যে হয়েছে। কিন্তু আবার সেই শতাধিক সংখ্যার সমস্যা। প্রথমত এত সংখ্যায় উপপত্নীকে গর্ভবতী করা অবাস্তব কারন নিশ্চিত হতে ১০১এর কিছু বেশি সংখ্যায় উপপত্নীর প্রয়োজন, দ্বিতীয়ত একইসাথে নির্দিষ্ট সংখ্যায় এতগুলি শিশু জন্মাবে এটাও অসম্ভব, তৃতীয়ত যদি জন্মায়ও তৎকালীন যুগে শিশুমৃত্যুর হার নিশ্চয়ই বেশি ছিল তাই সবকটি বাঁচবে এটাও নিশ্চিত নয়। তাই যেখানে আগে থেকেই ব্যাসদেবের বরে এটা নিশ্চিত যে ১০১টি শিশু জন্মাবে সেখানে এই উপায় করলে ব্যাসদেবের সম্মানের সমস্যা হবার সম্ভাবনা ছিল।
এদিকে একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে মৃত ভ্রূণকে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার যে লৌকিক আচার তা বহু প্রাচীন পদ্ধতি। তাই এতে অবিশ্বাস করার মত বিশেষ কিছু নেই, এক ওই শতাধিক ভাগে ভাগ করা ছাড়া। এর একটা কারণ হতে পারে যে দুবছর গর্ভাবস্থা চলা মানে ভেতরে ভেতরে ভ্রূণটি আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তাই তাতে আঘাত করে বিশেষ কিছু তফাৎ হয়নি। এক্ষেত্রে অনেক দিন ধরে যদি কোনো অপক্ক ভ্রূণ গর্ভে থেকে যায় তবে তা ধীরে ধীরে একরকম শক্ত পিণ্ডে পরিণত হয় যা হয়তো মাটিতে মিশতে অনেক সময় নেয়, তাই তাকে শতাধিক ভাগে ভাগ করে তার মাটির সাথে মিশে যাওয়াটাকে সহজ ও দ্রুত করার চেষ্টা করতে হয়েছে।
এবার সর্বশেষ যে মতটি পেয়েছি সেটি হলো সবচেয়ে সহজে প্রায় সমবয়সী এতগুলি শিশু জোগাড় করা যেতে পারে দত্তকের মাধ্যমে। হ্যাঁ, রাজা রাজড়াদের মধ্যে অনের পুত্র দত্তক নেওয়া বহু প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। হয়তো পিতৃমাতৃহীন বা এমন বহু শিশু ব্যাসদেবের মত একজন ঋষির সন্ধানে ছিল। প্রথম গর্ভপাত হবার পর যে দু বছরের কথা বলা হয়েছে সেই সময় গান্ধারী সত্যিই তিনটি সন্তানের জন্ম দেন যথাক্রমে দুর্যোধন, দুঃশাসন ও দুঃশলা। বাকিদের ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী ব্যাসদেবের তত্ত্বাবধানে দত্তক নেন। এতে তাদের ভবিষ্যতে খুব একটা সমস্যা হবার কথা নয় কারন এই দত্তক সন্তানেরা সবাই দুর্যোধন ও দুঃশাসনের থেকে বয়সে ছোট ছিল। দুর্যোধনের সমবয়সী যদিও যুযুৎসু ছিল কিন্তু বিদুরের মত তারও মায়ের পরিচয়ের জন্য রাজ্যলাভের কোনো কারণ ছিলোনা। এছাড়াও এদের বয়সও এমন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাছা হয়েছিল যাতে এরা সবাই প্রায় কমবেশি সমবয়সী হয়।
এছাড়াও পুরো মহাভারতে যখনই কৌরবদের কথা এসেছে তখনই পুত্রদের মধ্যে শুধুমাত্র দুর্যোধন ও দুঃশাসনেরই উল্লেখ আছে আর কারো নেই। দুঃশলার ক্ষেত্রে তো শিশুপালের সাথে বিবাহের কথা আছে এবং পরবর্তীকালে তার বৈধব্যেরও উল্লেখ আছে। তাছাড়া দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় যুযুৎসু ও বিকর্ণের কথা আছে, তাও প্রধানত কৌরবদের বিরোধিতা করার কারনে। সম্ভবত দুর্যোধন ও দুঃশাসন ছাড়া বাকিরা কেউই রাজপরিবারের সাথে থাকতোই না। তাই তাদেরকে সমষ্টিগত ক্ষেত্রগুলি ছাড়া অন্য কোনো সময়ই পাওয়া যায়না। এমনকি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দুর্যোধন কর্ণ এবং অন্য মহারথীদের মৃত্যুর জন্য যে পরিমান দুঃখ প্রকাশ করেছিল তার একাংশ ও দেখা যায়নি তাকে দুঃশাসন ছাড়া আর বাকি ভাইদের জন্য করতে। মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী, দুর্যোধন, দুঃশাসন ইত্যাদিদের এই রকম বিভিন্ন আচরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে কৌরবদের ১০০পুত্রের মধ্যে প্ৰথম দুজন ছাড়া বাকীদেরকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হতো না। তাই এদেরকে কৌরবদের ১০০জন পুত্র না বলে ১০০জন সদস্য বলাই হয়তো সঠিক হবে।
আশাকরি আমার এই আলোচনা ধর্মী বিশ্লেষণ পাঠকদের বিবেচনার বিষয় হবে, এবং তা যদি কারো বিশ্বাসে কোনোভাবে আঘাত করে তবে আমি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে মহাভারত নামক ঘটনার মহাসাগরকে অসংখ্য ভাবে বিশ্লেষণ করা যায়, এটি তেমনই এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র।
সত্যিই যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে।
(#অমিতাভ)
Comments
Post a Comment